ব্লুটুথ যেভাবে কাজ করে থাকে | Techtunes


বন্ধুরা আশাকরি সকলেই ভালো আছেন। কোনো অ্যাপ ছাড়া এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে কোনো ভিডিও, অডিও কিংবা পিকচার শেয়ার করার কথা মাথায় আসলেই চলে আসে ব্লুটুথ এর কথা। অনেক সময় আপনার মাথায় এ প্রশ্নও আসতে পারে যে, এই ব্লুটুথ আসলে কিভাবে কাজ করে? আজকে আমি এ বিষয়টি আপনাদের সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো।

আপনারা যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তবে আপনি তো ব্লুটুথ সেই ছোট্ট বেলা থেকে ব্যবহার করে আসছেন। কেননা ছোট্ট বেলার সেই নোকিয়া ফোনেও আপনারা ব্লুটুথ দেখতে পেতেন। আজ ব্লুটুথ এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আপনার ফোনে যেটি না হলে হয়তোবা এমনও কাজ রয়েছে যেটা করতেই পারতেন না।

Bluetooth share

বর্তমানে শুধু এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ভিডিও কিংবা অডিও শেয়ারই নয়, বরং এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তনও হয়েছে। ভিডিও কিংবা অডিও শেয়ারিং এর বাইরে ব্লুটুথ এর কথা মাথায় আসলে চলে আসে ব্লুটুথ হেডফোন ও স্পিকার এর কথা।

চলুন কথা বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে

সর্বপ্রথম বলে নেওয়া যাক ব্লুটুথ আমাদের ফোনে কেন দরকার। এটা তো আপনারা সকলেই জানেন, অবশ্যই ডেটা ট্রান্সমিশন এর জন্য। আপনি যখন মোবাইলে কথা বলেন তখন সেই ডাটা এনালগ থেকে ডিজিটাল কনভার্ট হয়ে টাওয়ারে যাচ্ছে এবং অপর ব্যক্তির কাছে সেই ডাটা ডিজিটাল থেকে এনালগ হচ্ছে এবং তারপর সে শুনতে পাচ্ছে। এরকমই ব্লুটুথের জন্য মোবাইলে একটি এন্টেনা থাকে, যেটা ডাটা ট্রান্সমিশনে সাহায্য করে।

এই ব্লুটুথ হচ্ছে ওয়্যারলেস যোগাযোগের একটি পদ্ধতি। এর range ১০ মিটার। তবে বিদ্যুৎ কোষের শক্তি বৃদ্ধি করলে এর range ১০০ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তাই বলা যায়, ব্লুটুথ হচ্ছে ১ থেকে ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে ওয়্যারলেস যোগাযোগের একটি পদ্ধতি। যা ক্ষুদ্র পাল্লার জন্য প্রণীত একটি ওয়্যারলেস প্রোটোকল। ব্লুটুথ একসঙ্গে ৮ টি যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ সাধন করতে পারে। তবে প্রত্যেকটি যন্ত্রকে ১০ মিটার ব্যাসার্ধের একটি বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করতে হবে। কেননা ব্লুটুথ প্রযুক্তি চারিদিকে বৃত্তাকার পথে সর্বোচ্চ ১০ মিটার পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকে।

এখন আপনা প্রশ্ন হতে পারে, ৮ টি ডিভাইস একসঙ্গে যুক্ত থাকলে এর যোগাযোগের কোনো বাধার সৃষ্টি হয় কি না?

এর উত্তর হলো না। কারণ ব্লুটুথ এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে যা “spread-spectrum frequency hopping” নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে কোন ডিভাইস কম্পাঙ্ক হতে ৭৯টি পৃথক কম্পাঙ্ক এলোমেলোভাবে গ্রহণ করে এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তা একের পর এক পরিবর্তন করতে থাকে। ট্রান্সমিটার প্রতি সেকেন্ডে ১৬০০ বার কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করে। যার ফলে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসগুলোর মধ্যে একই সময়ে একই কম্পাঙ্ক এর তথ্য প্রেরণ করা প্রায় অসম্ভবই বললে চলে। এই পদ্ধতিতে একই সময়ে একাধিক ডিভাইসগুলো একই কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে না যার ফলে একে অপরের যোগাযোগে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।

দুটি ডিভাইস একে অন্যের সাথে যুক্ত হতে চাইলে যেকোনো একটি চ্যানেল বেছে নেয় এবং যদি সেটি সেই মুহূর্তে ব্যাবহৃত অবস্থায় থাকে, তাহলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আরেকটি চ্যানেল বাছাই করে নেয়। কোনো বৈদ্যুতিক ডিভাইসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হওয়ার জন্য এবং নিরাপত্তার খাতিরে এরা প্রতি সেকেন্ডে হাজারবার এক ফ্রিকোয়েন্সি থেকে অন্য ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন করে নেয়।

ব্লুটুথ অন্যান্য তরঙ্গ নির্ভর ডিভাইসের কাজে বাধা সৃষ্টি করে কি?

ব্লুটুথ অন্যান্য তরঙ্গ নির্ভর যন্ত্রের কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে না। কারণ এ প্রযুক্তিতে প্রেরিত সিগন্যালের ক্ষমতা থাকে মাত্র ১ মিলিওয়াট। যেখানে ৩ ওয়াট পর্যন্ত সিগন্যাল প্রেরণ করে সেলফোন। অর্থাৎ উচ্চ ক্ষমতার সিগন্যালে নিম্ন ক্ষমতার সিগন্যাল ব্লুটুথ সিগন্যাল কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না।

ব্লুটুথ যোগাযোগ ব্যাবস্থায় ২.৪৫ গিগাহার্ট্‌জ এর কম্পাংক ব্যবহৃত হয়। ব্লুটুথ বিভিন্ন ভার্সনের রয়েছে। যেমন ১.০, ২.০, ৩.০, ৪.০২, ৫.০ ভার্সন ইত্যাদি। ব্লুটুথ তাদের পূর্ববর্তী ভার্সন থেকে পরের ভার্সনটিতে উন্নতি করে। আগের ভার্সনের রেঞ্জ থেকে কিছুটা রেঞ্জ বাড়ানো, ব্যাটারি খরচ কমানো, ডাটা ট্রান্সফার স্পিড কিছুটা বাড়ানো এছাড়া আরো কিছু পরিবর্তন। যেমন প্রথমে ব্লুটুথ ১.০ এর তথ্য আদান প্রদান করার সর্বোচ্চ গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১ মেগাবিট। কিন্তু বর্তমানে ৫.০ এর সর্বোচ্চ গতি হলো প্রতি সেকেন্ডে ২ মেগাবাইট। যদিও এর সর্বোচ্চ স্পিড সবসময় পাওয়া যায় না।

ব্লুটুথ প্রোটোকল বাস্তবায়নকারী ডিভাইসগুলি দ্বিমুখী সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কাজ করে। বর্তমানে মোবাইল, কম্পিউটার, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, প্রিন্টার ইত্যাদি প্রভৃতি যন্ত্রাগুলোতে ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এই প্রযুক্তিতে খুবই কম বিদ্যুৎ খরচ করে।

বন্ধুরা এই ছিল আজকের টিউন। আশাকরি টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলে জোসস করবেন। আপনার কোনো মতামত থাকলে টিউনমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



Source link

  • Related Posts

    প্রাইভেট টিউটর দের কাজ মোবাইলের মাধ্যমে করিয়ে নেয়ার অভিনব ৫ টি উপায়! | Techtunes

    পাঠ্যবইয়ের পড়া যতোই স্কুলে বা কলেজে শিখিয়ে দেয়া হোক না কেন, বাড়িতে এসে প্রতিটি শিক্ষার্থীই সব এলোমেলো করে ফেলে। তাইতো বাড়িতে থাকা চাই একজন প্রাইভেট টিউটর। একজন টিউটর যে কোনো…

    কৃত্রিম উপগ্রহের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এক বিস্ময়কর যাত্রার গল্প | Techtunes

    সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই মানুষ রাতের আকাশে তারার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। চন্দ্র-সূর্য ও তারকারাজি আমাদের মনে জন্ম দিয়েছে নানান সব প্রশ্নের। বিশ্ব মন্ডল সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের আজন্ম কৌতূহলের প্রধান…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *