পুরাতন মোবাইল কেনার আগে যে ৫ টি বিষয় অবশ্যই চেক করে নেয়া উচিত | Techtunes


আমরা প্রায়ই একটু কম দামে মোটামুটি ভালো একটি মোবাইল কিনতে চাই। তো সেক্ষেত্রে আমরা পুরাতন মোবাইল ক্রয় করার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ি। কেননা ব্যবহৃত মোবাইল গুলো মার্কেট প্রাইস এর থেকে তুলনামূলক অনেক কম দামে কেনা যায়। আর যেহেতু কম বাজেটের মধ্যে হাই কোয়ালিটি মোবাইল কিনতে পারছি তাহলে কেন আমরা বেশি টাকা খরচ করবো?

অনেকেই একটা ফোন কিছুদিন ব্যবহার করে আবার একটি ব্রান্ড নিউ ফোন নিয়ে নেয়। ফলে আগের ফোনটি একটু কম দামে বেচে দেয়। অনেকে আবার হঠাৎ বিপদে পড়ে ভালো মানের ফোন কম দামে বেচে দেয়। কেউতো আবার চোরাই ফোন কিংবা নষ্ট ফোন সার্ভিসিং করে একদম ফ্রেস ফোন বলে বিক্রি করে থাকে। তাই ভালো ফোন আর সমস্যা যুক্ত ফোনের মধ্যে পার্থক্য না করতে পারলেই আমরা লস খেয়ে বসে থাকব।

তাইতো পুরাতন ফোন কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় খুব ভালোভাবে চেক করে নিতে হবে৷ পুরাতন মোবাইল কেনার আগে যে ৬ টি বিষয় অবশ্যই চেক করে নিতে হবে তার একটি তালিকা আজকের টিউনে তুলে ধরা হলো। তাই আপনি যদি পুরাতন মোবাইল কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে পুরো টিউনটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

১. সিকিউরিটি চেক করুন

সিকিউরিটি চেক করুন

পুরাতন মোবাইল কিনে বিপদে পড়েছেন এমন দৃষ্টান্ত আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। অপরিচিত লোকের কাছ থেকে মোবাইল কিনলে আমরা কিন্তু মোবাইলের আসল মালিক কে চিনি না। হতে পারে মোবাইলটি চুরি করে এনে আপনার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন হলে আপনি যখনই মোবাইলে আপনার সিম কার্ড ওপেন করবেন সাথে সাথে মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্রাক করে আপনাকে আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হবে। অথচ আপনি তো কিছুই জানেন না।

তাই পরিচিত হোক কিংবা অপরিচিত, যে কারো কাছ থেকে মোবাইল কেনার সময় মোবাইল এর কাগজপত্র বুঝে নিতে হবে। মোবাইল ক্রয়ের রশিদ, মোবাইল এর বাক্স বা প্যাকেট, ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি কার্ড (যদি থাকে) চেয়ে নিতে হবে। এবার মোবাইল এর বাক্সের ওপরে IMEI নম্বরটি দেখে নিন। কাগজপত্রের IMEI নম্বর এর সাথে মোবাইল এর IMEI নম্বর মিলছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে।

IMEI নম্বর চেক করার জন্য মোবাইলে *#০৬# এই ডিজিট লিখে ডায়াল করুন। ডায়াল করার পরে ১৫ ডিজিট এর একটি IMEI নম্বর চলে আসবে। মোবাইলের কাগজপত্রের IMEI নম্বর এবং মোবাইলের IMEI নম্বর মিলে গেলে বুঝতে হবে এই মোবাইল এর তেমন কোনো আইনী ঝামেলা নেই। কেননা অবৈধ ফোন হলে সেই ফোনের কাগজপত্র বিক্রেতার কাছে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২. মোবাইলের ডিসপ্লে চেক করুন

মোবাইলের ডিসপ্লে চেক করুন

বৈধতা চেক করে তো নিশ্চিত হলেন যে এই মোবাইলটি আপনি কিনতে পারবেন। কিন্তু এবার আপনাকে চেক করতে হবে যে মোবাইলটি কতোটুকু ব্যবহারযোগ্য। এজন্য প্রথমেই আপনাকে মোবাইলের ডিসপ্লে চেক করে নিতে হবে। খেয়াল করুন ডিসপ্লের ওপরে কোনো স্পট আছে কিনা কিংবা কেনো ফাটা আছে কিনা। মোটামুটি নতুন ফোন হলে ডিসপ্লের ওপরে কোনো প্রকার সমস্যা থাকবে না।

এরপর খেয়াল করুন ডিসপ্লের চারপাশে কোনো অংশ ফাঁকা আছে কিনা। অর্থাৎ ডিসপ্লের পুরো সেটিংস শতভাগ ঠিকঠাক আছে কিনা। চারপাশ ভালোভাবে চেক করার পর যদি দেখা যায় কোনো অংশ থেকে একটুও ফাঁকা আছে তাহলে বুঝতে হবে মোবাইলটি খোলা হয়েছে। আর ভালোভাবে চেক করে যদি মনে হয় ফোনটি খোলা হয়েছে তাহলে সেটি না কেনাই ভালো। কেননা ফোন একবার খোলা হলে সেটি তুলনামূলক অনেক কম লাস্টিং করে। এমনও হতে পারে মোবাইলটা খুলে এর কোনো পার্টস পরিবর্তন করে নকল পার্টস লাগানো হয়েছে।

এরপর ডিসপ্লের টাচস্ক্রীন চেক করার পালা। এক্ষেত্রে মোবাইলের যে কোনো একটি App কে ট্যাপ করে ধরে পুরো ডিসপ্লের ওপর কিছুক্ষণ ঘোরাতে থাকুন। যদি দেখেন App টি Smoothly ঘুরছে তাহলে বুঝবেন টাচস্ক্রীনে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। আর যদি App টি ঘোরানোর সময় কোনো প্রকার আটকে যায় বা অফ হয়ে যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে ফোনটি খুব Slow কাজ করবে। অর্থাৎ এর টাচস্ক্রীন সেন্সর খুব বেশি শক্তিশালী না। সুতরাং ডিসপ্লে সেকশন এর সার্বিক দিক ভালোভাবে বিবেচনা করে তবেই একটি ফোন কোনার চেষ্টা করুন।

৩. ক্যামেরা লেন্স চেক করুন

ক্যামেরা লেন্স চেক করুন

যে কোনো পুরাতন মোবাইল ক্রয় করার সময় খুব ভালোভাবে দেখে নেবেন যে লেন্স এর ভেতরের দিকে ধুলোবালির কোনো কণা আছে কিনা। মোবাইলটি যদি একবারও খোলা হয় তাহলে ঐ মোবাইলের ক্যামেরার লেন্সে ধুলোবালি প্রবেশ করবে। সামান্য একটা দুইটা ধুলোর কণা দেখলেও ঐ মোবাইল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়া উচিত। কেননা একবার যেহেতু ধুলো প্রবেশ করার জায়গা তৈরি হয়েছে সুতরাং পরবর্তীতে আরও ধুলো লেন্সে প্রবেশ করবে।

একটা সময় পর পুরো লেন্স এর ওপরে ধুলোর একটি মোটা স্তর পড়ে যাবে এবং ক্যামেরা আর কোনো কাজে আসবে না। এই সমস্যাটি ব্যাক ক্যামেরা এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা উভয় ক্ষেত্রেই দেখা দেবে। তাই পুরাতন মোবাইল ক্রয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাক ক্যামেরা এবং ফ্রন্ট ক্যামেরার লেন্স খুব ভালোভাবে চেক করে করে নেয়া জরুরি।

৪. ব্যাটারি ব্যাকআপ চেক করুন

ব্যাটারি ব্যাকআপ চেক করুন 

মোবাইল এর ব্যাটারি ব্যাকআপ চেক করার জন্য হয়তো খুব বেশি সুযোগ পাবেন না। তবে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে কয়েকটি ট্রিকস ফলো করে মোবাইল এর ব্যাটারি ব্যাকআপ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে পারবেন। প্রথমেই মোবাইল এর ইন্টারনেট সংযোগ করে বেশ কয়েকটি ভাড়ি App পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য ব্যবহার করে দেখুন। এই সময়টুকুতে কতো পারসেন্ট চার্জ কমছে তা লক্ষ করে সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন যে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন হবে।

আপনি আরেকটি কাজ করে ব্যাটারি ব্যাকআপ চেক করতে পারেন। এক্ষেত্রে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে মোবাইলটি বেশ কয়েকবার রিস্টার্ট দিন। রিস্টার্ট দেয়ার আগে চেক করুন চার্জ কতো পারসেন্ট আছে। আবার রিস্টার্ট হওয়ার পরে মোবাইল ওপেন হলে চেক করুন চার্জ কতো পারসেন্ট কমলো। ব্যবধান যদি এক থেকে পাঁচ পারসেন্ট এর মধ্যে হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো হবে।

সুতরাং পুরাতন মোবাইল কেনার সময় হাতে একটু সময় নিয়ে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ চেক করে নেয়া উচিত। নয়তো কিছুদিন পরে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

৫. স্পিকার এবং সবগুলো পোর্ট চেক করুন

স্পিকার এবং সবগুলো পোর্ট চেক করুন

মোবাইলের হার্ডওয়্যার গুলো চেক করার সময় সবার আগে স্পিকার এর দিকে নজড় দিন। এক্ষেত্রে যে কোনো গান পুরোপুরি লাউডে দিয়ে বাজিয়ে দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কিনা। পাশাপাশি মাউথ স্পিকার এবং এয়ার স্পিকার ঠিক আছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য একটি পরিচিত নম্বরে কল করে কথা বলে দেখতে পারেন সাউন্ড কোয়ালিটি কেমন।

পাশাপাশি চার্জার পোর্ট, এয়ারফোন পোর্ট সচল আছে কিনা তা সাথে সাথে পরিক্ষা করে নিতে হবে। আর একটি বিষয় চেক করবেন যে সিমকার্ড স্লট এর সবগুলো অপশন ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে কিনা। কেননা বেশিরভাগ সময় দেখা যায় দুইটা সিমকার্ড ব্যবহারের অপশন থাকলেও তার মধ্যে একটা অকেজো হয়ে যায়। তাই সব হার্ডওয়্যার গুলো ভালোভাবে পরিক্ষা করে দেখে নিন।

৬. কানেকটিভিটি চেক করুন

কানেকটিভিটি চেক করুন

মোবাইল একটু পুরোনো হলেই এর কানেক্টিভিটিতে দেখা যায় হাজারটা সমস্যা। সেলুলার ডাটা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট কানেকশন, ব্লুটুথ কানেকশন, হটস্পট কানেকশন অনেক স্লো হয়ে যায়। তাই সবগুলো অপশন ঠিকঠাক ভাবে কানেক্টেড হয় কিনা তা অবশ্যই চেক করে নিতে হবে। এজন্য প্রথমেই সিম ওপেন করে কাউকে কল করে দেখে নিন সেলুলার ডাটা ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে কিনা। একবার নয় বরং কয়েকবার এভাবে কল করে চেক করে নিন।

মোবাইল ডাটা বারবার অন অফ করে দেখে নিন যে প্রতিবার ঠিকভাবে ইন্টারনেট কানেক্টেড হচ্ছে কিনা। এভাবে ব্লুটুথ, হটস্পট সহ সব ধরনের কানেকশন গুলো অন করে চেক করে নিন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মোবাইলটি আপনি চুজ করতে পারেন।

শেষকথা

পুরাতন মোবাইল না জেনে বুঝে কেনা আসলেই কিছুটা রিস্কি। তাই উপরের টিপস গুলো অনুসরণ করে পুরাতন মোবাইল কিনুন। আশাকরি আপনার লস হবে না। বরং কম বাজেটে একটি আশানুরূপ মোবাইল কিনতে পারবেন৷ আর একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, একদম অচেনা অজানা লোকের কাছ থেকে পুরাতন মোবাইল না কেনাই ভালো।

আর মোবাইল এর মূল্য নির্ধারণ করার আগে অবশ্যই গুগল সার্চ করে এর মার্কেট প্রাইস দেখে নিবেন। সেইসাথে এটাও বিবেচনায় রাখবেন যে মোবাইলটি কতোদিনের পুরোনো। আশাকরি নিজেই নিজের বাজেট অনুযায়ী একটি আশানুরূপ মোবাইল খুঁজে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ।



Source link

  • Related Posts

    যে ৪ টি সময়ে মোবাইল ব্যবহার করলে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি | Techtunes

    স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে এখন মানুষের চব্বিশ ঘণ্টার সঙ্গী। স্মার্টফোন ছাড়া যেন আমরা এখন একটা মুহূর্ত-ও কল্পনা করতে পারি না। সময়ে অসময়ে সারাক্ষণ আমাদের হাতে মোবাইল থাকেই। প্রয়োজন না হলেও এটি…

    App রিভিউ এর কাজ করে আয় করুন! অনলাইন ইনকাম এর একটি চমৎকার উপায় | Techtunes

    অনলাইন থেকে টাকা আয় করার কতো কতো মাধ্যম যে এখন রয়েছে তার হয়তো নির্দিষ্ট কোনো পরিসীমা নেই। কিন্তু আমরা সবগুলো আয়ের উপায় জানি না বিধায় কাজ করতে পারি না। অনেকেই…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *